Saturday, December 7, 2013

টুডে ব্লগঃ মওত ও জানাযা , ( দয়া করে লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করুন )

আমাকেও তো একদিন গোসল দেওয়া হবে, কাফন পরানো হবে। আমারও তো জানাযা হবে, দাফন হবে। অন্ধকার কবরে আমাকেও তো ঈমানের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আমারও কবরে ফেরেশতা আসবে, জান্নাত-জাহান্নাম আমারও সামনে তুলে ধরা হবে। হায়! সেদিন আমার কী অবস্থা হবে?

তাই তো দয়ার নবী পূর্ব থেকে সতর্ক করে বলেছেন-

عودوا المرضى وأتبعوا الجنائز يذكركم الآخرة

তোমরা রোগীদের দেখতে যাও এবং জানাযার পিছনে পিছনে গমন কর। এটা তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ৩/২৩, হাদীস : ১১১৮০

সাহাবা-তাবেয়ীন কোনো মৃতকে দেখলে, কারো জানাযায় শরীক হলে মৃত্যু ও মৃতের চিন্তা তাদের উপর এমনই প্রভাব ফেলত যে, অনেকদিন পর্যন্ত তাদের চেহারায় তা দৃশ্যমান থাকত।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বর্ণনা করেন

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا شهد جنازة رؤيت كآبة وأكثر حديث النفس.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কেনো জানাযায় হাজির হতেন তখন পেরেশানী ও বিষণ্ণতা তাঁকে আচ্ছন্ন করত এবং তিনি খুব বেশি চিন্তামগ্ন হয়ে যেতেন।-আলমু’জামুল কাবীর তাবারানী ১১১

হযরত আব্দুল আযীয ইবনে আবি রাওয়াদ বর্ণনা করেন :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো জানাযায় শরীক হতেন তখন খুব নিশ্চুপ থাকতেন এবং চিন্তায় ডুবে যেতেন।

বর্ণনাকারী বলেন : সাহাবায়ে কেরাম মনে করতেন, তিনি এসময় মৃতকে নিয়ে ভাবতেন-সে এখন কী-পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে এবং কী তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।-কিতাবুয যুহদ, আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক পৃ. ১০৭

একবার হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রা. হযরত আলী রা. কে জানাযা সংক্রান্ত বিষয় জিজ্ঞাসা করলেন। হযরত আলী রা. বললেন, আবু সায়ীদ, যখন আপনি আপনার মুসিলম ভাইয়ের জানাযার সাথে চলবেন তখন নিশ্চুপ থাকুন, এবং মনে মনে ভাবুন আপনার অবস্থাও তার মতো হয়েছে। সে ছিল আপনারই ভাই, যে আপনার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল। আজ সে নিঃস্ব-বিপর্যস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছে, নেক আমল ছাড়া আজ তার কোনো পুঁজি নেই।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ৮৩৯

হযরত অয়েশা রা. বিশিষ্ট সাহাবী হযরত উসাইদ ইবনে হুযায়র রা. এর একটি বাণী বর্ণনা করেন : উসাইদ ইবনে হুযায়র ছিলেন শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন। তিনি বলেন : তিনটি সময়ে আমার যে অবস্থা হয় যদি সর্বদা ঐ অবস্থায় থাকতে পারতাম তাহলে নিশ্চিত হতাম যে, আমি একজন জান্নাতী মানুষ। যখন আমি কুরআন তেলাওয়াত করি বা কারো তেলাওয়াত শুনি; যখন আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বয়ান শুনি আর যখন কারো জানাযার নামাযে উপস্থিত হই। যখনই আমি কারো জানাযার নামাযে উপস্থিত হয়েছি তখন এ ভাবনাই আমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, এখন এই মৃতের পরিণাম কী হবে এবং তার সাথে কী আচরণ করা হবে।-কিতাবুয যুহদ পৃ. ১০৭

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত মুতাররিফ ইবনে শিখখীর সম্পর্কে হযরত বুদাইল রাহ. বলেন, হযরত মুতাররিফ রাহ. জানাযায় গেলে এতই চিন্তামগ্ন থাকতেন যে, সেখানে ঘনিষ্ঠ কারো সাথে সাক্ষাৎ হলেও শুধু সালাম দিতেন এবং নিজের চিন্তায় ডুবে যেতেন।-কিতাবুয যুহদ পৃ. ১০৮

বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, তারা অর্থাৎ সাহাবা কেরাম এবং প্রবীণ তায়েবীগণ জানাযায় শরীক হলে কয়েকদিন পর্যন্ত চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন যা তাদের মাঝে দৃশ্যমান থাকত।

ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহ.-এর ‘কিতাবুয যুহদ’-এ একটি অধ্যায় আছে, যার শিরোনাম

باب التفكر في اتباع الجنائز

(জানাযার অনুসরণের সময় চিন্তা করা)। তাঁর এক ছাত্র নুআইম রাহ বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক যখন এ অধ্যায়টি পড়াতেন তখন তার এমন অবস্থা হত যে, আমরা কেউ তার কাছে যেতে পারতাম না, তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞাসাও করা যেত না, তিনি এমন ছটফট করতেন যেমন সদ্য জবাইকৃত গরু ছটফট করে।-কিতাবুয যুহদ (টিকা) পৃ. ১০৭

আপাতত এ কয়েকটি হাদীস-আসার উল্লেখ করেই বিষয়টির ইতি টানছি। এগুলো থেকেই সালাফের অবস্থা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে উঠে।

কিন্তু আমাদের অবস্থা এর বিপরীত। মৃতকে সামনে নিয়ে হৈচৈ, তর্ক-বিতর্ক, গীবত-শেকায়েতেও লিপ্ত হয়ে পড়ি।

অথচ আখেরাতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য মৃত্যুর চেয়ে অধিক কার্যকরী আর কোনো বিষয় নেই। আল্লাহ আমাদের হৃদয় ও মস্তিষ্ককে জীবন্ত করে দিন এবং তাঁর খাঁটি বান্দাদের অনুসরণের তাওফীক আমাদেরকে দান করুন। আমীন। ইয়া রাববুল আলামীন।
কপি-পেষ্টঃ টুডে ব্লগঃ মওত ও জানাযা

No comments:

Post a Comment